SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - পোশাকের শিল্প উপাদান ও শিল্পনীতি | NCTB BOOK

পোশাকের জন্য মানানসই রং নির্বাচন করে ব্যক্তিকে আরও মাধুর্যময় করে তোলা যায়। আবার যে রং মানায় না সে রঙের পোশাক পরলে মানুষকে মলিন দেখায়। প্রকৃতপক্ষে সবই রঙের কারসাজি। যেহেতু রঙের ভূমিকা ব্যাপক তাই পোশাকের রঙের প্রতি আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পোশাকে রঙের ভূমিকা সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো-

. সুন্দর ব্যক্তিত্ব গঠন - রং চেহারার মধ্যে আশ্চর্য পরিবর্তন আনতে পারে। পোশাকের রং সঠিকভাবে নির্বাচন করলে একটি সাধারণ মেয়েকে অসাধারণ মনে হবে। বয়স, ব্যক্তিত্ব, উপলক্ষ ইত্যাদি অনুসারে পোশাকে উপযুক্ত রং নির্বাচনে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে পোশাকের ত্রুটিপূর্ণ রং নির্বাচন ব্যক্তির সৌন্দর্য বা ব্যক্তিত্বকে ম্লান করে দিতে পারে। পোশাকের রং নির্বাচন করার সময় তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

. দেহত্বকে উজ্জ্বলতা প্রদান পরিধানকারীর দেহ ত্বকের উপর পোশাকের রঙের প্রভাব অনেক বেশি। তাই পোশাকের রং এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যাতে দেহত্বক বাহ্যিক দৃষ্টিতে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

  • ফর্সা একজন মেয়েকে যে কোনো রঙের পোশাকেই সুন্দর দেখাবে। অন্যদিকে গায়ের রং শ্যামলা হলে গাঢ় রং বর্জন করে হালকা রং নির্বাচন করতে হবে, যাতে তার গায়ের রং উজ্জ্বল দেখায়
  • শ্যামলা মেয়েরা যদি মানানসই হালকা উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরে তবে তাদের কিছুটা ফর্সা লাগবে।

. দেহাকৃতির পরিবর্তন রং পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যক্তিবিশেষকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মোটা বা পাতলা হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। তাই দেহাকৃতি বিবেচনা করে পোশাকের রং নির্বাচন করা উচিত

  • লম্বা মধ্যম দেহাকৃতির মেয়েরা বয়সের সাথে সঙ্গতি রেখে সব রঙের পোশাকই নির্বাচন করতে পারে।
  • খাটো বা পাতলা দেহাকৃতির পক্ষে দুই রং বিশিষ্ট পোশাক উপযুক্ত হবে না। ধরনের মেয়েদের সাধারণত হালকা রঙের পোশাকই মানায়। হালকা রঙের শাড়ি, ব্লাউজ এরা নির্বাচন করতে পারে
  • মেয়েদের পাতলাভাব বাহ্যিক দৃষ্টিতে কমানোর জন্য উজ্জ্বল রঙের পোশাক নির্বাচন করা যেতে পারে। সরু কোমরের অধিকারীর শাড়ি ব্লাউজ বিপরীত রঙের হতে পারে, কিন্তু যাদের কোমর ভারী তারা একই রঙের জামা কাপড় পরতে পারে।
  • মোটা মেয়েদের গাঢ় রঙের পোশাক পরলে আরও মোটা দেখাবে। তাই হালকা রঙের সালোয়ার, কামিজ, ওড়না, শাড়ি, ব্লাউজ অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ এরা নির্বাচন করতে পারে।

. প্রাধান্য সৃষ্টি পোশাকের রং নির্বাচন করার সময় দেহের সুন্দর অংশকে প্রাধান্য দিতে হলে উক্ত ক্ষেত্রে উজ্জ্বল বা গাঢ় রং নির্বাচন করা যেতে পারে। যেমন -

  • ফ্রকের গাঢ় রঙের ডিজাইন ব্যবহার করে ফ্রকটিকে আকর্ষণীয় করা যায়
  • হালকা রঙের শাড়িতে গাঢ় রঙের ডিজাইন সৃষ্টি করেও প্রাধান্য আনা যায়
  • বিপরীত রং ব্যবহার করেও পোষাকের আকর্ষণ বাড়ানো যেতে পারে।

আবার কোনো ব্যক্তি যদি নিজেকে প্রকাশ করতে না চায় তাহলে শীতল বা হালকা রঙের পোশাক নির্বাচন করতে পারে, এতে করে শরীরের কোনো অংশই বেশি প্রাধান্য পায় না।

. পোশাকে সমন্বয় রক্ষা রং পোশাকের ডিজাইনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই দেহ ত্বক শারীরিক - গঠনকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য পোশাকে সন্নিবেশিত বিভিন্ন রঙের সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত, যাতে সব রং মিলে একটি সমন্বয়ের আভাস পাওয়া যায়। একটি পোশাকে বিভিন্ন রং ব্যবহৃত হতে পারে। ক্ষেত্রে পোশাকে সমন্বয় রক্ষা করতে হলে

  • দুটি রঙের ব্যবহার এক না হয়ে একটি অপরটি হতে বেশি হওয়া উচিত।
  • আবার যখন হালকা রঙের পোশাক নির্বাচন করতে হয় তখন পোশাকের ছোট ছোট অংশে গাঢ় রং ব্যবহার করা উচিত।
  • ছাড়া কোনো ব্যক্তির জন্য যে রং মানানসই হবে পোশাকে সে রং দিয়ে প্রাধান্য সৃষ্টি করা যেতে পারে।

কাজ: তোমার দেহাকৃতি বিবেচনা করে কোন রঙের পোশাক ব্যবহার যথাযথ তা ব্যাখ্যা কর

পোশাকে রেখার প্রভাব- পোশাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে রেখা একটি শক্তিশালী শিল্প উপাদান। কতোগুলো রেখার - সমন্বয়ে একটি পোশাকের আকৃতি গড়ে উঠে। পোশাকের নকশায় রেখার বৈচিত্র্যময় বিন্যাসের ফলে পরিধানকারীকে কখনো লম্বা, কখনো খাটো, কখনো মোটা, আবার কখনো রোগা মনে হয়। পোশাকের নকশায় রেখার সুষ্ঠু বিন্যাসের মাধ্যমে দেহের ছোটখাটো ত্রুটি গোপন করা যায়

রেখা মূলত দুই প্রকার- () খাড়া রেখা () বক্র রেখা। ছাড়া রেখার গতিপথের ওপর নির্ভর করে রেখাকে আবার ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১। খাড়া রেখা ২। সমান্তরাল রেখা ৩। কোনাকুনি রেখা ৪। বক রেখা ৫। তীর্যক রেখা এবং ৬। ভগ্ন রেখা

প্রতিটি রেখার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা পরিধানকারীর দেহ কাঠামো, উচ্চতা, মুখমণ্ডল, গ্রীবা প্রভৃতির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এসব রেখার সুচিন্তিত নির্বাচন সুষম বিন্যাসের মাধ্যমে দেহের ত্রুটি গোপন করে ব্যক্তিত্বকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। এখানে পোশাকের ওপর বিভিন্ন রেখার প্রভাব তুলে ধরা হলো

১। খাড়া রেখা- খাড়া বা লম্বা রেখা গম্ভীর উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা, সাহস, সততা ইত্যাদি প্রকাশ করে। এই রেখা সাধারণত কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য আপাত দৃষ্টিতে বাড়ায়। তাই এই রেখার নকশার পোশাক মোটা খাটো ব্যক্তির জন্য বিশেষ উপযোগী। এতে দেহের খাটো ভাব কিছুটা দূর হয় এবং দেখতে লম্বা মনে হয়

 

২। সমান্তরাল রেখা - ধরনের রেখার মাধ্যমে বিশ্রাম আরামের অনুভূতি আসে লম্বা রোগা মানুষের জন্য ধরনের রেখার পোশাক উপযোগী। এতে তাদের দেহের কৃশ ভাব কিছুটা কম মনে হয়। ধরনের মেয়েরা চওড়া পাড়ের শাড়ি, আড়াআড়ি রেখার ডুরে শাড়ি পরতে পারে। এই রেখা আপাত দৃষ্টিতে কোনো কিছুর দৈর্ঘ্যকে হ্রাস করে এবং প্রশস্ততা বৃদ্ধি করে।

 

৩। বক্র রেখা- বক্র রেখা দিয়ে কোমলতা, নমনীয়তা, তৎপরতা ইত্যাদি বোঝানো - হয়। বক্র রেখার গতি ঊর্ধ্বমুখী হলে আনন্দ-উল্লাস বোঝায়। পক্ষান্তরে গতি নিম্নমুখী হলে তা বিষাদের ভাব প্রকাশ করে। ঢেউ খেলানো বক্র রেখা আপাত দৃষ্টিতে দৈর্ঘ্য কমায়, তবে সৌন্দর্য কোমনীয়তা বাড়িয়ে দেয়। এরূপ রেখা পোশাকে বৈচিত্র্য ছন্দ আনে

 

৪। তীর্যক বা কৌণিক রেখা তীর্যক রেখা সংযমের পরিচয় বহন করে। এই রেখার বৈচিত্র্যময় ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো কিছুর দৈর্ঘ্য হ্রাস বৃদ্ধি করা যায়। তীর্যক রেখাগুলো ঊর্ধ্বমুখী, সরু কাছাকাছি হলে পরিধানকারীকে লম্বা এবং অন্যদিকে নিম্নমুখী, চওড়া কাছাকাছি না হলে মোটা খাটো মনে হবে।

 

৫। আঁকাবাঁকা বা জিগজ্যাগ রেখা এই রেখা দ্বৈত ভূমিকা পালন করে। এই রেখাগুলোর - কোণের মাত্রা দিকের উপর নির্ভর করে কোনো কোনো সময় ব্যক্তিকে লম্বা এবং কোনো কোনো সময় খাটো মোটা মনে হয়

পোশাকে বিন্দুর প্রভাব যে কোনো শিল্পের building block বা ভিত্তি হচ্ছে বিন্দু। বিন্দু বড়, ছোট, মোটা বা চিকন হতে পারে। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, তাদের প্রত্যেকের মাঝেই আছে রেখা। আর এই রেখার সৃষ্টি হয় বিন্দু থেকে। ছোট একটি বিন্দু যখন গতি পায় তখন তা থেকেই রেখা, আকার, আকৃতি গঠিত হতে পারে। আবার অসংখ্য ছোট ছোট বিন্দুর সমন্বয়ে নতুন এক অনুভূতির মাধ্যমে জমিন সৃষ্টি করা যায়, যাকে stippling বলে। পোশাকে বিন্দুর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ছন্দ আনায়ন করা যায়

কাজপোশাকে বিভিন্ন ধরনের রেখার প্রভাবের উপর একটি চার্ট তৈরি কর।

Content added By